অনলাইনে আয় করার আরেকটি অসাধারণ পথ হলো ইউটিউবিং করা। ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় সম্পর্কে অনেকেই জানি না। অনলাইন আয় এর পথ হিসাবে ইউটিউব এর কথা হয়ত আপনি অনেকবার শুনে ফেলেছেন।
আজকের এই লেখার মাধ্যমে আমরা জানবো ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় (How to earn money from YouTube) গুলোর বিষয়ে।
যদি আপনি অনলাইন ইনকাম করার সহজ উপায় খুঁজে থাকেন, তাহলে কিভাবে ইউটিউব চ্যানেল থেকে ইনকাম করা যায় সেবিষয়ে জেনে রাখা আপনার জন্য লাভদায়ক হবে।
বাংলাদেশে ইতিমধ্যে অনেক বড় বড় ইউটিউবার আছে যারা মাসে ইনকাম ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত করছেন। হাঁ আপনিও কিন্তু চাইলেই ইউটিউব ভিডিও বানিয়ে ইনকাম করা শুরু করে পারেন।
ইউটিউব থেকে আয় করার উপায়
আপনার দরকার হবে একটি ক্যামেরার । তবে আপনার ক্যামেরা না থাকলেও চলবে। প্রথমে অনেক বড় বড় ইউটিউবার-ই মোবাইল দিয়ে ভিডিও করে শুরু করেছেন তাদের ইউটিউব যাত্রা। সফল হওয়ার পরে এখন তারা দামি দামি গেজেট ব্যবহার করে থাকেন।
আপনার কন্টেন্ট যদি ভালো হয়ে থাকে, প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে যদি আপনি নিয়মিত ভিডিও বানাতে পারেন, তাহলে খুব তাড়াতাড়িই আপনি ভালো ভিউয়ার পেয়ে যাবেন। তবে এক্ষেত্রে একটি ছোট্ট টিপস দিয়ে রাখি, আপনারা যদি সত্যিই প্রফেশনালভাবে ইউটিউবে কাজ করতে চান তাহলে ভিডিওর অডিও ও ভিডিও এডিটিং খুবই ভালো ভাবে আয়ত্ত করতে হবে।
ইউটিউবে নিজের একটি চ্যানেল বানান
ইউটিউব চ্যানেল থেকে টাকা আয় করার ক্ষেত্রে, সবার প্রথম কাজটা হলো সুন্দর করে নিজের একটি ইউটিউব চ্যানেল বানানো।
YouTube চ্যানেল কিভাবে বানাবেন ?
- আপনার প্রথমে ইউটিউব ওয়েবসাইটে যেতে হবে। ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার প্রথমে নিজের জিমেইল আইডি details (আইডি এবং পাসওয়ার্ড) দিয়ে YouTube এ লগইন করে নিতে হবে।
আজকাল সবারই একটি জিমেইল একাউন্ট আছে। আর আপনি নিজের সেই জিমেইল আইডি দিয়েই YouTube এ লগইন করে নিতে পারবেন।
আপনার যদি Google account না থাকে, তাহলে আপনাকে জিমেইল এর ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি জিমেইল একাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে।
চ্যানেল কিভাবে বানাবেন তা নিয়ে বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন
YouTube এ চ্যানেল যেভাবে বানাবেন
৫ টি চ্যানেল আইডিয়া
ব্লগিং টপিকসঃ ব্লগিং অনলাইন আয়ের বেশ পুরাতন একটি মাধ্যম। কিন্তু এটি অনেক কার্যকরী একটা পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে বেশ ভালো অঙ্কের টাকা প্রতি মাসেই আয় করা সম্ভব। এটি মূলত একটি ডিজিটাল নিউজ পেপার এর মতো। বর্তমান সময়ে অনেকেই blogging শেখার জন্যে ইন্টারনেটে প্রচুর তথ্য সার্চ করে থাকেন। তাই, আপনি যদি blogging এবং WordPress এর সাথে জড়িত সুন্দর করে tutorial video বানিয়ে আপলোড করতে পারেন তাহলে সেই চ্যানেল এর জনপ্রিয়তা থাকবে।
মোবাইল ফোন রিভিউঃ মোবাইল ফোন রিভিউ করে আজকাল অনেকেই YouTube থেকে আয় করছেন। আর আপনিও চাইলে নতুন নতুন মোবাইল রিভিউ দিয়ে ভিডিও বানাতে পারেন। আপনি যত ভালো মোবাইলের বিষয়ে সব ভেঙে বলবেন ততোটাই লোকেরা আপনার ভিডিও পছন্দ করবে।
টেকনোলজি বিষয়ঃ আজ ইন্টারনেটে ব্লগ বলুন কি ইউটিউব এ ভিডিও সবখানেই টেকনোলজি আর টেকনোলজি। এই নিয়ে লোকেরা ইন্টারনেটে অনেক ধরনের পোস্ট করছেন। এর কারণ, টেকনোলজি আজ সবথেকে লোক প্রিয় বিষয়। তাই এবিষয়ে ভিডিও বানালে আপনার ভিডিও সবাই দেখবে এবং আশা করি ইনকাম ও অনেক হবে।
টিউটোরিয়াল ভিডিওঃ আজকাল সবাই চ্যানেলে কিছুনা কিছু টিউটোরিয়াল ভিডিও আপলোড করে চ্যানেলকে successful করে ফেলছেন। এর বেশ কিছু কারণ হলো, টিউটোরিয়াল ভিডিও ইন্টারনেটে সব থেকে বেশি লোক প্রিয়। বিভিন্ন রকমের টিউটোরিয়ালস ইউটিউবে সার্চ করতেই থাকেন। টিউটোরিয়াল ভিডিও বলতে, এমন কোনো বিষয়ে ভিডিও বানানো যেখানে আপনি কিছু বিষয়ে বুঝিয়ে বলছেন। মানে যেকোনো জিনিস কিভাবে করবেন, কিভাবে বানাবেন এসব নিয়ে।
অনলাইন ইনকাম টপিকসঃ আজকাল প্রত্যেকেই ঘরে বসে অনলাইনে ইনকাম করার নতুন নতুন উপায় গুলো খুজেঁ। তাই, আপনি ইন্টারনেটে নতুন নতুন ইনকাম সোর্স এবং tutorial গুলো ভিডিওর মাধ্যমে শেয়ার করতে পারবেন। এই ধরণের ভিডিও লোকেরা দেখে অনেক পছন্দ করে থাকেন।
কিভাবে ঘরে বসে ইনকাম করতে হয়ঃ অনলাইনে আয় করার ১০ টি সেরা উপায়
চ্যানেলে ভিডিও আপলোড করতে থাকুন
ইউটিউব করে ইনকাম করার ক্ষেত্রে কিন্তু কনটেন্ট আপলোডের পর থেকেই ইনকাম করতে পারবেন এমনটা না। গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হলো চ্যানেলে ইন্টারেষ্টিং ভিডিও বানিয়ে আপলোড করা।
আপনি যা ভিডিও আপলোড করবেন সেগুলিতে বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আপনি গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে টাকা আয় করতে পারবেন। আর তাই, আপনি কি ধরনের ভিডিও আপলোড করছেন তা অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ।
তবে মজার ব্যাপার হলো আপনার চ্যানেল একবার স্পটলাইটে আসলে খুব সহজেই গুগল এডসেন্স এর পাশাপাশি আরো বিভিন্ন আয়ের পথ আপনার খুলে যাবে।
YouTube এ monetization চালু করার নিয়ম
ইউটিউব চ্যানেল থেকে আয় করতে চাইলে কনটেন্ট আপলোডের পাশাপাশি সবার আগে চ্যানেল মনেটাইজ হতে হয়। চ্যানেল মনেটাইজ হওয়ার জন্য আপনার চ্যানেলে ১০০০ সাবস্ক্রাইবার ও ৪০০০ঘন্টা ওয়াচ আওয়ার টাইম প্রয়োজন হয়।
সর্বনিম্ন এক হাজার সাবস্ক্রাইবার এবং ন্যূনতম ভিউ টাইম হয়ে গেলে আপনি ইউটিউব মানিটাইজেশন এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর পরে প্রতিটা ভিডিওতে মানিটাইজেশন একটিভেট করে নিতে হবে। আর এভাবেই আপনার ইনকাম শুরু হয়ে যাবে।
যেহেতু এই প্রয়োজনীয় সাবস্ক্রাইবার ও ওয়াচ টাইম পূর্ণ করতে অনেক সময় লাগে, তার মানে হলো ইউটিউবিং করে ইনকাম শুরু করতে হলে প্রথমে আপনার বেশ কয়েক দিন খাটতে হবে।
Monetization চালু করার সব স্টেপস গুলি সম্পূর্ণ করার পর আপনাকে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ, apply করার পর YouTube এর official team আপনার চ্যানেলকে review করে দেখবেন। রিভিউ করার পর তারা দেখবে যে আপনার চ্যানেল আর তার ভিডিও গুলি সব দিক দিয়ে যোগ্য আছে কি নাই।
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনার চ্যানেলকে YouTube team monetization এর জন্য approve করে দিতে বাধ্য থাকবে। তারপর আপনি ভালো ভালো ভিডিও বানিয়ে চ্যানেলে আপলোড করবেন আর বিজ্ঞাপনের দ্বারা টাকা ইনকাম হবে।
ইউটিউব থেকে আয়ের টাকা কিভাবে তুলবো ?
গুগল এডসেন্সের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আপনি যত টাকা আয় করবেন তা আপনার বানানো গুগল এডসেন্স একাউন্টে জমা হতে থাকবে। যখন আপনার এডসেন্সে ১০০ ডলার জমা হয়ে যাবে সেই ১০০ ডলার আপনাকে এডসেন্স নিজে নিজেই আপনার ব্যাংক একাউন্টে ট্রান্সফার করে দিবে।
তারপর ২ থেকে ৩ দিনের ভিতরে আপনার টাকা আপনার ব্যাঙ্ক একাউন্টে চলে আসবে। এডসেন্স থেকে টাকা পাওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে Google adsense এর payment অপশনে গিয়ে নিজের ব্যাংক একাউন্ট details ভালো মত সেট করে দিতে হবে।
অবশই মনে রাখবেন, ভুল ব্যাংক একাউন্ট details দিলে আপনার টাকা আপনার ব্যাংকে কোনো মতে আসবেনা। তাই, সঠিক এবং ভালোকরে নিজের ব্যাংক details গুগল এডসেন্স একাউন্টে add করে নিবেন।
ইউটিউব থেকে আয় করার কয়েকটি উপায়
ইউটিউব থেকে আয়ের একাধিক রকমের পথ রয়েছে। বর্তমানে ইউটিউব কর্তৃপক্ষের গুগল এডসেন্স থেকে ছাড়াও আপনি বিভিন্ন জায়গা থেকে স্পন্সারের মাধ্যমেও টাকা ইনকাম করতে পারবেন। দেখা গেলো কোনো একটা কোম্পানি কোনো একটা পন্যের মার্কেটিং এর জন্য আপনার ভিডিও তে তার ওই পন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে দিল।
আপনি এক্ষেত্রে বিজ্ঞাপন দিতে সম্মতি প্রকাশ করলে আপনাকে আপনার চাহিদা অনুযায়ী সে পেমেন্ট করবে। যেমনঃ প্রোডাক্ট প্রোমোশন, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং, ইত্যাদি। এভাবে অসংখ্য ইউটিউবার মোটা অংকের আয় করে থাকেন।
আপনি চাইলে নিজের পণ্য বা সার্ভিস গুলোকে YouTube চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচার ও বিক্রি করিয়ে টাকা আয় করতে পারবেন। অধিক subscriber সহ থাকা নিজের ইউটিউবের চ্যানেল বিক্রি করেও আপনি টাকা কামাতে পারেন।
শেষ কথাঃ
ইউটিউব থেকে আয় করার উপায় আমি আপনাদের স্টেপ বাই স্টেপ ভালো করে বুঝিয়ে দিলাম। আপনাকে প্রথম দিকে অনেক ভালোকরে কাজ করতে হবে। ভালো ভালো ভিডিও বানাতে হবে কারন লোকেরা আপনার ভিডিও দেখে ভালো ফিল করেন। প্রথম দিকে টাকা আয় করার কথা মোটেও ভাববেননা। চ্যানেল বানিয়ে ১ থেকে ৩ মাস মন দিয়ে কাজ করতে থাকুন। আশা করি সফল হবেন। ধন্যবাদ।