পরিস্থিতি এবং আয়ের পরিমাণ চিন্তা করে অনেকেই ক্যারিয়ার হিসেবে এই পেশা বেছে নিচ্ছে। তবে Nursing পড়তে হলে অবশ্যই সরকারি নার্সিং ভর্তি যোগ্যতা ও সুবিধা অসুবিধা ভালোমত জেনে নিতে হবে।
সেবাই মানুষের ধর্ম। আর ধর্ম পালন করার একটি অন্যতম পেশা হল নার্সিং। বর্তমানে এই পেশার চাহিদা বেড়েই চলেছে।
আপনি কি নার্স হতে চান? তাহলে বলবো আজকের লিখাটি আপনার জন্য। বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে অনেক নার্সিং ইনস্টিটিউট রয়েছে।
যেখানে পড়াশোনা করে আপনি সহজেই আপনার নার্সিং ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন।
আরও জানুনঃ উপবৃত্তির জন্য কি কি কাগজপত্র লাগবে?
সরকারি নার্সিং ভর্তি যোগ্যতা ও সুবিধা অসুবিধা
এই লিখায় আপনি সরকারি নার্সিংয়ের ভর্তি নিয়ে জানতে পারবেন।

সরকারি নার্সিং ইনস্টিটিউট: সরকারিভাবে বাংলাদেশে ৭ টি ইনস্টিটিউটে বিএসসি ইন নার্সিং, ৪ টি কলেজে পোস্ট বেসিক বিএসসি ইন নার্সিং, এবং ডিগ্রি অফ পাবলিক হেলথ নার্সিং দেওয়া হয়।
এদেশে ৪৩ টি পাবলিক নার্সিং ইনস্টিটিউট আছে।
যেখানে আপনি ভর্তি হলে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স এবং ডিপ্লোমা ইন নার্সিং মিডওয়াইফারি ডিগ্রি পেতে পারেন।
নার্সিং এর মেয়াদ
আপনি যদি বিএসসি নার্সিং এ ভর্তি হোন, তাহলে আপনার কোর্সের মেয়াদ হবে ৪ বছর।
যদি ডিপ্লোমাতে ভর্তি হোন, তাহলে কোর্সের মেয়াদ হবে ৩ বছর।
কোর্স শেষ করার পর ৬ মাসের জন্য ইন্টার্নশীপ করতে হয়।
তবে যারা ডিপ্লোমা করবেন তাদের জন্য একটা সুবিধা হলো, তারা চাইলে দুই বছর মেয়াদি বেসিক বিএসসি ইন নার্সিং ও পোস্ট বেসিক বিএসসি ইন পাবলিক হেলথ নার্সিং কোর্সে অংশ নিতে পারবেন।
এতেই শেষ নয়, আপনি চাইলে অরথোপেডিক,পেডিয়াট্রিক,সিসিইউ,আইসিইউ,সাইকিয়াট্রিক, এবং কার্ডিয়াক নার্সিং কোর্স ও করতে পারবেন।
এই বিষয় গুলোতে কোর্সের মেয়াদ ১ বছর।
ফলাফল
আপনি বিএস সি ইন নার্সিং ও ডিপ্লোমা যেটাই করতে চান না কেন, সেক্ষেত্রে এস এস সি এবং এইচ এস সি উভয় পরীক্ষা মিলে জিপিএ ন্যূনতম ৬ থাকতে হবে।
বিশেষ করে বিএসসি কোর্সের জন্য আলাদা ভাবে জিপিএ দুই পরীক্ষাতে ২.৫ থাকতে হবে।
জীববিজ্ঞানে ৩.০ থাকতে হবে এবং ডিপ্লোমার জন্য জিপিএ কমপক্ষে ২.২৫ থাকতে হয়।
সরকারি নার্সিং এর খরচ
নার্সিং কে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার আগে অবশ্যই এর খরচ সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।
সরকারি কলেজে বিএসসি নার্সিং কোর্স করতে খরচ পড়বে আনুমানিক ৮০,০০০ থেকে ১ লক্ষ ৮০,০০০ অবধি।
এই খরচের মাত্রা প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী ভিন্ন হয়ে থাকে।
আর আপনি যদি ডিপ্লোমা কোর্স করেন তাহলে সেক্ষেত্রে তাহলে কোন ফি দিতে হয়না, তদুপুরি আপনি মাসিকভাবে কিছু ভাতা পাবেন।
তাই বলতে গেলে সরকারি খাতে ডিপ্লোমাতে আহামরি কোন খরচ নেই।
সরকারি নার্সিং কলেজের উপবৃত্তির ব্যবস্থা
সরকারি নার্সিং কলেজে চান্স পেলে আপনি পড়াশোনার পাশাপাশি মাসিকভাবে উপবৃত্তি পাবেন। বিএসসি ইন নার্সিং এ চার বছর মেয়াদি কোর্স করানো হয়।
তাই এইখানে ইয়ার ভেদে উপবৃত্তির পরিমাণ ও ভিন্ন হয়।
| বছর | মাসিক উপবৃত্তির পরিমাণ(টাকা) |
| ১ম বছর | ১,৭০০ টাকা |
| ২য় বছর | ১,৮০০ টাকা |
| ৩য় বছর | ১,৯০০ টাকা |
| ৪র্থ বছর | ২,০০০ টাকা |
আপনি যদি বিএসসি ইন নার্সিং করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে এস এস সি এবং এইচ এস সি তে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হতে হবে এবং অবশ্যই জীববিজ্ঞান থাকতে হবে।
তবে যদি ডিপ্লোমা করতে চান তাহলে আপনি যে কোন বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হলেই করতে পারবেন।
এর জন্য বিজ্ঞান বিভাগ হতেই হবে এমন কোন কথা নেই।
হোস্টেল খরচ
আপনি যদি হোস্টেলে থাকতে চান তাহলে প্রতিমাসে থাকা খাওয়া খরচ বাবদ ৯০০ থেকে ১,২০০ টাকা খরচ হবে।
এই পরিমাণ প্রতিষ্ঠান ভেদে ভিন্ন হতে পারে।
এই টাকা আপনি চাইলে নিজের পকেট থেকে ও দিতে পারেন, বা উপবৃত্তি থেকে ও দিতে পারেন, সেটা আপনার বিবেচনা।
আমার মতে, উপবৃত্তির টাকা থেকে ও দেওয়াই ভাল, আপনি হোস্টেল বাবদ খরচ করে ও হাতে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকার মত হাতে থাকবে।
নার্সিং এ কাজের সুযোগ
নার্সিং একটি উত্তম সেবামুলক পেশা।
এর মাধ্যমে আপনি রোজগারের পাশাপাশি নিজের চারিত্রিক অনেক গুণাবলি ও উন্নত করার সুযোগ পাবেন।
বর্তমানে দেশে নার্সদের অনেক চাহিদা।
দেশের সরকারি, বেসরকারি অনেক হাসপাতাল,ক্লিনিক,হেলথ সেন্টার, মাদার কেয়ার সেন্টার,বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে্র মেডিকাল কেয়ার সেক্টর।
এরকম বিভিন্ন জায়াগায় নার্সদের চাকুরির সুযোগ রয়েছে।

আপনি এটা জেনে আরও খুশি হবেন,শুধু মাত্র দেশে হয় এমনকি বিদেশে ও নার্সদের চাকুরির সুযোগ রয়েছে।
কয়েক বছরের পরিসংখ্যান ঘাঁটাঘাঁটি করলে দেখা যায় যে, মালয়শিয়া ,জর্ডানের মত অনেক মুসলিম দেশে আমাদের দেশ থেকে নার্স নেওয়া হয়েছে।
বেতন স্কেল
নার্সিং কে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার আগে এই বেতন স্কেল জানাটা ও অত্যন্ত জরুরি।
আপনি কেমন বেতন পাবেন তা নির্ভর করবে আপনার ডিগ্রী ,কাজের ধরনের উপর।
সরকারি ক্ষেত্রে শুরুর দিকে আপনার বেতন ৮,০০০ থেকে ১৬,৫৮০ টাকার মত হবে (২০০৯ এর বেতন স্কেল অনুযায়ী ) আর বেসরকারি ক্ষেত্রে আপনার বেতন শুরুতেই ১৪,০০০-১৫,০০০ টাকার মত হবে।
বর্তমানে সরকারি নার্সিং সুবিধা অসুবিধা
আমাদের দেশে এখন নার্সদের অনেক চাহিদা, তাই এই মাধ্যমে ক্যারিয়ার বেছে নিলে, জীবনে অনেক এগিয় যাওয়া যাবে, যদি আপনি কাজটা সততা এবং নিষ্ঠার সাথে করেন।
যে কোন কাজের সুবিধা ও অসুবিধা দুই দিক ই থাকে, এখন Nursing এর সুবিধা এবং অসুবিধা গুলো জেনে নেওয়া যাক।
সরকারি নার্সিং এর সুবিধাঃ
- বর্তমানে যেহেতু নার্সদের অনেক চাহিদা, তাই এই পেশায় ক্যারিয়ার গড়ে তুললে বেকার হওয়ার চিন্তা কম থাকে। কোথাও না কোথাও তো আপনার চাকরি হবেই।
- নার্সিং লাইনে পড়াশোনা এত বেশি ব্যয়বহুল নয়। আর যেহেতু কাজের অনেক সুযোগ তাই এই ক্ষেত্রে পড়াশোনা একটি সফল বিনিয়োগ ই বলা যায়।
- আপনি যদি ধৈর্য নিয়ে কাজ করে যেতে পারেন, তাহলে কিছুদিনের মধ্যেই আপনি নার্স সুপারভাইজার, নার্স ম্যানেজার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাবেন।এই গুলো এই লাইনের খুব ই মর্যাদা পূর্ণ পদ।
- আপনি শুধু দেশেই নয় বিদেশে ও কাজ করার সুযোগ পাবেন।
- কাজের পাশাপাশি নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ও অনেক কিছু জানতে পারবেন, যা সুস্থ থাকার জন্য জানা অত্যন্ত জরুরি।
- আপনার যদি যথাযথ শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকে আপনি নার্স থেকে ডাক্তার ও হয়ে যেতে পারবেন।
সরকারি নার্সিং ভর্তি যোগ্যতা ও সুবিধা অসুবিধা

নার্সিং এ অসুবিধা
- অতিরিক্ত মানসিক এবং শারীরিক চাপ নিতে হয়। যার জন্য অনেক ধৈর্যশীল হতে হয়।
- অনেক রাত জাগতে হয়।
- রোগীর সাথে অনেক সময় কাটাতে হয় বলে, মানসিকভাবে অনেক চাপ থাকে।
- ছুটি নেওয়ার সুযোগ কম থাকে।
- ছোঁয়াচে রোগ গুলাতে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা থাকে।
- অনেক পরিশ্রম করতে হয়।
নার্সিং কি কি কাজ করতে হয়?
শুরু থেকেই বলা হয়েছে, নার্সিং একটি সেবামুলক পেশা।
সুতরাং, এই কাজের শুরু থেকে শেষ অবধি আপনাকে সেবা ই করে যেতে হবে।
এখন কিভাবে সেবা করতে হবে, কোথায় করতে হবে, এই নিয়েই এখন বিস্তারিত আলোচনা করা হবেঃ
- একজন নার্স হিসেবে আপনাকে হাসপাতালের ইনডোর,আউটডোর অপারেশন থিয়েটার সব জায়গায় কাজ করতে হবে।
- ডাক্তারের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
- রোগীর পথ্য অনুযায়ী রোগীকে ওষুধ খাওয়াতে হবে। তার খেয়াল রাখতে হবে।
- কেবিন বা রুম পরিদর্শন করতে হবে।
- অপারেশন থিয়েটার থেকে রোগীকে আনা নেওয়া করতে হবে।
- রোগীর অবস্থা ডাক্তার কে জানাতে হবে।
শেষ বক্তব্য
আজকের এই লিখায় সরকারি নার্সিং ভর্তি যোগ্যতা ও সুবিধা অসুবিধা এবং nursing সংক্রান্ত সকল তথ্য দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
আশা করি আপনারা উপকৃত হয়েছেন।
আপনারা যারাই নার্সিং এ ক্যারিয়ার গড়তে চান,তাদের জন্য অগ্রিম শুভকামনা জানিয়ে শেষ করছি। ধন্যবাদ।














